এবার পাগলা মসজিদের দানবাক্সে পাওয়া গেল ১১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা
প্রকাশিত : ২১:৩৬, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২১:৪৯, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে দানের টাকার গণনা-কার্যক্রম টানা ১৩ ঘন্টা পর শেষ হয়েছে। এবার দান বাক্সে পাওয়া গেছে মোট ১১ কোটি ৭৮ লাখ ৪৮ হাজার ৫৩৮ টাকা। নগদ টাকার পাশাপাশি দানবাক্সে পাওয়া গেছে সোনা ও রূপার অলঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রাও।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাত সোয়াটার দিকে পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে আজ শনিবার সকাল ৭টায় খোলা হয় মসজিদের ১৩টি লোহার দানবাক্স। তিন মাস ২৭ দিন পর বাক্স খোলার সঙ্গে সঙ্গেই চোখে পড়ে টাকার স্তূপ। এ যেন টাকার পাহাড়। এগুলো ভরতে প্রয়োজন হয় ৩৫টি বস্তা। টাকা গণনার কাজ চলে মসজিদের দোতলায়। সেখানেই চলে দিনভর গণনা।
গণনায় অংশ নেয় পাঁচ শতাধিক কর্মী। ছিলেন মসজিদের কর্মচারী, মাদ্রাসার ছাত্র, ব্যাংক কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবকরা। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে চলে গণনার কাজ। এই গণনার কাজ তদারকি করেন জেলা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
নিরাপত্তায় ছিল সেনা, পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যরা।
এর আগে গত ৩০ আগস্ট দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় ১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকা। চলতি বছরের ১২ এপ্রিল দান বাক্সে পাওয়া যায় ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা বলেন, দানকারীদের বিশ্বাস, এখানকার দানে পূর্ণ হয় মনোবাসনা। অনেকে সুস্থতা ও মনের শান্তির জন্যও দান করেন এই মসজিদে। শুধু মুসলমান নয়, সব ধর্মের লোকজনই এখানে দান করে থাকেন। অনেকে নগদ টাকার পাশাপাশি দেন গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগিও।
তিনি বলেন, মানুষের দানের টাকা দিয়ে এখানে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে একটি দৃষ্টিনন্দন আন্তর্জাতিক মানের বহুতল ইসলামি কমপ্লেক্স। খুব শিগগিরই কমপ্লেক্সের কাজ শুরু করার জোর প্রস্তুতি চলছে।
কিশোরগঞ্জের পুলিশসুপার মোহাম্মদ ড. এসএম ফরহাদ হোসেন বলেছেন, গণনা প্রক্রিয়াটি ছিল সম্পূর্ণ সুরক্ষিত ও স্বচ্ছ। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই মসজিদের টাকা গণনার কাজ শেষ হয়েছে।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ব্যাংকে জমা রাখা মসজিদের তহবিলের অর্থ থেকে যে লভ্যাংশ পাওয়া যায়, তা থেকে ক্যান্সার, কিডনি ও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত দরিদ লোকদের সহায়তা করা হয়। পাগলা মসজিদের আর্থিক সহযোগিতায় চলে একটি মাদ্রাসাও।
তহবিলে বর্তমানে শত কোটিরও বেশি টাকা রয়েছে। এই অর্থ দিয়ে এখানে তৈরি হবে একটি আন্তর্জাতিক মানের বহুতল ইসলামি ককমপ্লেক্স। আর ভবিষ্যতে পাগলা মসজিদের সামাজিক সুরক্ষামূলক কর্মকাণ্ড আরো বাড়ানো হবে।
মসজিদ পরিচালানা কমিটির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, আপাতত মসজিদের তহবিল থেকে বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় করা হচ্ছে না। এগুলো কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য জমানো হচ্ছে। মসজিদের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের বেতনের টাকাটা কেবল ব্যয় করা হয়।
জেলা প্রশাসক পদাধিকারবলে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি।
তিনতলা বিশিষ্ট এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি শুধ ধর্মীয় নয়, কিশোরগঞ্জবাসীর বিশ্বাস ও আবেগের কেন্দ্রস্থল। যার খ্যাতি এরইমধ্যে দেশবিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনটি গম্বুজ ও পাঁচতলা ভবনের সামনে উঁচু মিনারবিশিষ্ট এই স্থাপনা যেন দাঁড়িয়ে আছে মানুষের ভালোবাসা আর দানের অসীম শক্তির সাক্ষ্য হয়ে।
এএইচ
আরও পড়ুন










